Header Ads

Header ADS

প্রাচীন মিশরের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও?

 

প্রাচীন মিশরের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও?



প্রাচীন মিশরের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও?

ভূমিকা:-
মিশরীয় সভ্যতা নীল নদের তীরে গড়ে ওঠে। মিশরীয় সভ্যতা উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের একটি প্রাচীন সভ্যতা। নীলনদের নিম্নভূমি অঞ্চলে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে। বর্তমানে এই অঞ্চলটি মিশর রাষ্ট্রের অধিগত। খ্রীঃ পূর্ব ৩১৫০ অব্দ নাগাদ প্রথম ফারাওয়ের -অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরের রাজনৈতিক একীকরণের মাধ্যমে এই সভ্যতা এক সুসংহত রুপ লাভ করে। এরপর তিন সহস্রাব্দ কাল ধরে চলে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিকাশ পর্ব। প্রাচীন মিশরের ইতিহাস একাধিক স্খায়ী রাজ্য এর ইতিহাসের একটি সুশৃঙ্খলিত ধারা।

ভৌগোলিক অবস্থান:-
প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমির দেশ মিশর। এছাড়াও বর্তমান উত্তর আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ এই মিশর। আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর পূর্বে নীলনদের অববাহিকায় মিশরীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটে-বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। দেশটির উত্তরে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিনে নুবিয়ার মরুভূমি, পূর্ব দিকে বয়ে গেছে লোহিত সাগর এবং পশ্চিম দিকে অবস্থিত লিবিয়া। নীল নদের দান বলে খ্যাত মিশর ভৌগোলিক দিক থেকে দক্ষিনাঞ্চল (upper) এবং উত্তরাঞ্চল (Lower) এই দুভাগে বিভক্ত। মিশরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত নীলনদ ভূমধ্যসাগরে মিলিত হয়েছে। বর্ষার সময় নীল নদের দু'কূল প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হতো। ফলে মিশরে উভয় অঞ্চলে পলিমাটি জন্মে উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।


মিশর নীলনদের দানঃ-
নীলনদের পানি উপচে দু'কূল ছাপিয়ে যাবার ফলে নবোপলীয় যুগের মানুষের কৃষি উৎপাদনসহ অন্যান্য বিষয়াদি ভাসিয়ে নিঃস্ব করে ফেলত। প্রাচীন মিশরে প্রতি বছর এ বন্যাকে রোধ করার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ,বাঁধ, কৃষি উপকরণ, সেচব্যবস্থা প্রভৃতি বিকাশের জন্য সাথে সাথে নগরের বিকাশ ঘটতে থাকে যা মিশরকে সভ্যতার পটভূমিতে পরিণত করে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মিশরীয় সভ্যতার সূচনাকারী জনগন পানির প্রাপ্যতা , "নীলনদকে কেন্দ্র করে কৃষি উৎপাদন, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ ও পশুপালনের জন্য তৃণভূমির সহজলভ্যতা ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় রেখে নীলনদের তীরবর্তী অঞ্চলসমূহে বসতি স্থাপন করেছিল।
নীলনদে ৪ মাস স্থায়ী বন্যার ফলে গাছ-গাছড়া পচে গিয়ে এবং এর সাথে জলধারায় পাহাড়ি লাল পাথুরে মাটি মিশে এক উর্বর পলিমাটির সৃষ্টি হতো। বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক "হেরোডোটাস" মিশরের উৎকর্ষতা দেখে বিস্মিত হয়ে তিনি মিশরকে " নীলনদের দান "বা" The gift of the Nile" বলে উল্লেখ করেছেন।


মিশরীয় সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থা:-
প্রাচীন মিশরীয়দের অর্থনৈতিক জীবন ছিল প্রাচুর্যপূর্ণ। টেক সই এই সভ্যতার প্রায় দুই হাজার বছর স্থায়ী হওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে মিশরীয় সভ্যতার অর্থনীতি।


১.কৃষিঃ-
নদের অববাহিকা প্লাবিত নীলনদের হওয়ায় দু'কুলের অববাহিকা উর্বর ভূমিতে পর্যাপ্ত ফসল জন্মাতো। উৎপাদন কাজের জন্য সাধারণ লাঙ্গল, কাঠের কোদাল ও বাঁড় ব্যবহার করা হত। তাদের উৎপাদিত ফসলের তালিকায় যব, গম, পিঁয়াজ, মুলা, বর্বটি, বার্লি, কাউন, পীচ, কার্পাস,শন জাতীয় তন্ত্র এবং বিভিন্ন বর্ণের শাকসবজি ও ফলমূল উল্লেখযোগ্য কৃষকরা তাদের মোট উৎপাদনের ১০%-২০% কর হিসেবে সরকারী কোষাগারে প্রদান করত। কৃষির গুরুত্ব প্রসঙ্গে wall bank ও EB Tylor উল্লেখ করেছেন,
"মিশরীয় ইতিহাসে কৃষি ছিল মূল অর্থনীতি"।

২. পশুপালন:-
প্রাচীন মিশরে ঐ সময় ছাগল, গরু, গাঁধা, ভেড়া, কবুতর, রাজহাঁস, পাতিহাঁস প্রভৃতি পালন করত।পশুর চামড়া মূল্যবান অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত ছিল এবং পশুর চামড়ার উপর ভিত্তি করে প্রাচীন মিশরে চামড়া শিল্পের বিকাশ হয়েছিল।


৩. ব্যবসা-বাণিজ্য:-
মিশরীয় অর্থনীতির ভিত্তি কৃষি আর ব্যবসা-বানিজ্য হলো মিশরীয় অর্থনীতির চালিকা শক্তি।
এ সময় গ্রিস, নুবিয়া, ইজিয়ান দ্বীপ, ফিনিশীয় ও প্যালেস্টাইনের সাথে মিশরের বাণিজ্য চলত। তাদের রপ্তানি- দ্রব্যের তালিকায় লিলেন কাপড়, গম, মৃৎপাত্র, চামড়া ও প্যাপিরাস ছিল উল্লেখযোগ্য আর আমদানী প্রব্যের তালিকায় হাতির দাঁত, স্বর্ণ, রৌপ্য, অস্ত্র, মালা ও সুগন্ধি দ্রব্য যেমন দেবদারু ও আবলুস কাঠ অন্যতম ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনার জন্য মিশরীয়রা বিষ্ক্রি ব্যবহারিক কলা-কৌশল শিখেছিল।
এ প্রসঙ্গে wall bank ও EB Tylor উল্লেখ করেছেন যে,
" ব্যবসা-বানিজ্যের ভিত্তি হিসেবে মিশরীয়রা বুকশিপিং ও অ্যাকাউন্টিং সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিল এবং লেনদেন করত বিনিময়ের মাধ্যমে।"


৪. শিল্প:
মিশরীয় সভ্যতায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। প্রাচীন মিশরে খ্রিঃ পূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে শিল্পকারখানায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। প্রাচীন রাজবংশীয় যুগে শিল্পের উত্তরণ ঘটে এবং দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। প্রাচীন মিশরে শিল্পের মধ্যে পাথর শিল্প, তাঁত শিল্প,বয়ন শিল্প,মৃৎশিল্প , চামড়া শিল্প, নৌযান শিল্প ও কাঁচ শিল্প ছিল উল্লেখযোগ্য। শিল্পের গুরুত্ব প্রসঙ্গে H.S Lucas উল্লেখ করেছেন,
" শিল্প স্থাপন ব্যাপকভাবে মিশরীয়দের অর্থনৈতিক জীবনকে উন্নত ও উৎসাহিত করেছিল"।


সামাজিক অবস্থাঃ-
মিশরীয়রা তাদের নিজস্ব প্রয়োজনের তাগিদেই সমাজ সংগঠন গড়ে তুলেছে। -আইনের চোখে ধর্ম বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই সমান। কিন্তু সম্পদ অধিকারের বিষয়ে সমাজে শ্রেণি বিভাজনের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়'- মিশরীয় সমাজে মানুষ ছিল দুটি ধারায় বিভক্ত।
১.মুক্ত মানুষ
২.দাস
স্বাধীন বা মুক্ত মানুষের মধ্যেও শ্রেণিবিভাজন ছিল সেগুলো হলো: রাজপরিবার, পুরোহিত, অভিজাত, লিপিকর, ব্যবসায়ী, শিল্পী, কৃষক ও ভূমিদাস।মুক্ত মানুষ ও ভূমিদাস উভয়কেই রাষ্ট্রীয় ও মন্দিরের কাজে অংশ নিতে হত। প্রয়োজনের তাগিদে সৈন্যবাহিনীতে ও যোগ দিত এবং ফারাওদের ব্যক্তিগত কাজও করতে হতো।


উপসংহার:-
সার্বিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা ছিল স্ব-মহিমায় উদ্ভাষিত অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। জ্ঞান বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্থাপত্য কলা, কৃষি ও শিল্পের মিশরীয়দের অবদান বিশ্ব ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।

No comments

Do leave your comments

Powered by Blogger.