Header Ads

Header ADS

রাজা রামমোহন রায়কে কেন ভারতের ” আধুনিক পুরুষ" বলা হয় ?(Why is Raja Rammohan Roy called India's "modern" man?)

 

রাজা রামমোহন রায়কে কেন ভারতের ” আধুনিক পুরুষ" বলা হয় ?(Why is Raja Rammohan Roy called India's "modern" man?)


রাজা রামমোহন রায়কে কেন ভারতের ” আধুনিক পুরুষ" বলা হয় ?(Why is Raja Rammohan Roy called India's "modern" man?)

ভূমিকা:
রাজা রামমোহন রায়ই প্রথম আধুনিক যুক্তিবাদী ও মনন ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন ও সংস্কার মুক্ত ধর্মপ্রচারের কথা বলেন, এছাড়া পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি তার সমর্থন ও আনন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তার রাজনৈতিক বিচার বিশ্লেষণ তাকে "প্রথম আধুনিক পুরুষ" অভিধায় ভূষিত করেছে।
আধুনিক ভারতের নির্মাতারুপে' ভারত পথিক ' রাজা রাম মোহন রায় যে সংস্কারমুখী কাজ গুলি করে গেছেন। তার ওপর ভিত্তি করেই ভারতবর্ষ আধুনিক রূপ পেয়েছে। তাই তাকে " ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত" বলা হয়, "আধুনিক ভারতের জনক" এবং "আধুনিক ভারতের ইরাসমাস" বলা হয়। মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে " রাজা" উপাধি দেন।

ডঃ বিপান চন্দ্র রামমোহনকে " নবজাগরণের কেন্দ্রবিন্দু " বলে আখ্যায়িত করেছেন। রামমোহন রায়ের মৃত্যু শতবার্ষিকীতে (১৯৩৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি) 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ইংরেজি প্রবন্ধে লিখেছিলেন,

"রামমোহন তার আমলের বিশ্বের সমস্ত মানুষের মধ্যে ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি সম্পূর্ণরূপে আধুনিক যুগের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন "
(Rammohon Roy inauguarated the modern age in india)
সামাজিক, শিক্ষা, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।

আধুনিক পুরুষ বলার কারণ সমূহঃ

১. সমাজসংস্কারের প্রথম উদ্যোগের জন্যঃ

* সতীদাহ প্রথার অবসানঃ- তৎকালীন সমাজে হিন্দুসমাজে মৃত স্বামীর চিতায় তার স্ত্রীকে নববধুর সাজে সাজিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে পুড়িয়ে মারা হত। এই সতীদাহ প্রথার থেকে নারী সমাজকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি তৎকালীন প্রায় ৩০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে স্বাক্ষর সম্বলিত এক আবেদন পত্র তৎকালীন বালোট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের” কাছে পাঠান। বেন্টিঙ্ক রামমোহনের আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৭ নং রেগুলেশন (Regulation - XVII) জারি করে সতীদাহকে বেআইনি বলে ঘোষনা করেন। এবং এই প্রথা ফৌজিদারি আদালতে শাস্তিযোগ্য অপরাধরূপে গণ্য হবে (১৮২৯ সালে ৪ডিসেম্বর)।
নারী কল্যান প্রচেষ্টাঃ প্রথম রামমোহন অনুভব করেছিলেন যে সমাজে নারীদের অবস্থানের উন্নয়ন ঘটানো এবং তাদের মর্যাদা বাড়ানো দরকার। তিনি মূলত যেসব সমাধান করতে চেয়েছিলেন সেগুলো হল:-

১. স্বামী বা পিতার সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা,

২.স্ত্রী শিক্ষার সার্বিক প্রসার। তিনি মনে করতেন নারীসমাজকে শিক্ষার আলোয় আসতে না পারলে সমাজের প্রগতি ও সভ্যতার উন্নতি রুদ্ধ হয়ে যাবে।

৩.কৌলীন্য প্রথার শিকার নারীসমাজকে রক্ষা করা।
৪. বিবাহ বিষয়ক এক নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা।

* জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতাঃ
রামমোহন হিন্দু সমাজের জাতিভেদ প্রথার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি জাতিভেদ প্রথার বিরুদেধ বিভিন্ন প্রমাণ তুলে ধারার জন্য বজ্রসূচি গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন।
সুশোভন সরকার বলেন, " হিন্দু সমাজে পতিত হওয়ার ভয়ে রামমোহন উপবীত ত্যাগের সাহস দেখাননি"

অন্যান্য সামাজিক প্রথাঃ
রামমোহন বালা বিবাহ, বহুবিবাহ,কন্যাপণ, কৌলিন্য প্রথা, গঙ্গা পসাগরে সন্তান বিসর্জনপ্রভৃতি প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যান। তিনি নারী পুরুষের সমান অধিকার ও বিধবা বিবাহ প্রচলনের জন্য যথেষ্ট তৎপর হয়ে কাজ করেন।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

.পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে প্রথম উদ্যোগের জন্যঃ-

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে রামমোহন ছিলেন পথিকৃৎ। ১৮১৩ সালের সনদ জন্য আইনে জাতীয় ত ভারতীয়দের শিক্ষার  ১ লক্ষ টাকা খরচের জন্য নির্দেশ আসে। পাশ্চাত্য শিক্ষা খাতে এই ১লক্ষ  টাকার দাবি জানিয়ে তিনি ১৮২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর Lord Amrmhast আর্মহাস্টকে তার মতামত জানিয়েছিলেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন: ডেভিড হেয়ারের সহযোগিতায় রামমোহন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
১.১৮২২ সালে 'অ্যাংলো হিন্দু কলেজ,
২.১৮২৫ সালে বেদান্ত কলেজ
৩.১৮৩০ সালে জেনারেল অ্যাসেম্বলী ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠায় আলেকজান্ডার ডাককে তিনি সহযোগিতা করেন। হেয়ার স্কুল, কোলকাতা স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠায়। রামমোহন ডেভিদ হেয়ারকে সাহায্য করেছিলেন।

গ্রন্থ ও সংবাদপত্র প্রকাশনাঃ এশিয়দের মধ্যে রামমোহন প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সংবাদপত্রের এর সাহাযে্য জনমত গঠনের জন্য তিনি বাংলা ভাষায় " সম্পাদ কৌমুদিও (১৮২১ খ্রী) এবং ১৮২২ সালে ১২ এপ্রিল ফারসি ভাষায়" মীরাৎ-উল- আখবার” নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।
এইসব পত্রিকায় সেই যুগের বিতর্কমূলক বিষয়ের সমাধান প্রকাশিত হত।
ডাঃ বিপান চন্দ্রের মতে, " রামমোহন ভারতের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও একজন অগ্রদূতের ভূমিকা নিয়েছিলেন"(Rammohan Roy Roy was pioneer of Indian Journalism)। " তুহফাত উল মোয়াহিদ্দীন" নামে ফারসী ভাষায় গ্রন্থ রচনা করেন।


ধর্ম সংস্কারে ভূমিকা :

* একেশ্বরবাদের প্রচারঃ মুর্তিপূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন বলেই তিনি একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই কারণে হিন্দু ধর্মের প্রকৃত স্বরুপ ও ঐতিহ্য বিশ্লেষণ করে তার বিশুদ্ধ রুপটি তিনি সকলের সামনে তুলে ধরেন। ১৮০৪ সালে একেশ্বরবাদ নিয়ে আরবী ও ফারসি ভাষায় রামমোহন রায়ের প্রথম বইটি প্রকাশিত হয় ' তুহফাত উল মুয়াহিদ্দিন নামে এবং মুখবন্ধ ছিল আরবী। এটি ফারসী ভাষায় লেখা।

* কুসংকারের বিরোধিতাঃ ধর্মীয় কুসংস্কারের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই তিনি বিরোধিতা করেন।প্রিন্স দারকানাথ ঠাকুর এর মত বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের সহযোগিতায় ১৮২৮ সালে "ব্রাহ্ম সমাজ" প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তিনি ১৮১৫ সালে আত্মীয় সভা" গঠন করে। তিনি হিন্দু ধর্মের গোড়া সিস্টেম পছন্দ করতেন না।
তিনি বলেন,
★পরমেশ্বর ছাড়া কারো বিরোধিতা করা যাবে না।।
★ কোনো মূর্তি বা চিত্র রাখা নিষিদ্ধ ছিল,
★অন্য কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক উক্তি করা যাবে না।
★ নৈতিক চরিএ, দয়া, দান ছাড়া অন্য বিষয় আলোচনা নিষিদ্ধ ছিল।
১৮৩০ সালে ব্রাহ্মন সমাজের  উপসনাগার তৈরি করা হয়।

উপসংহারঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে রামমোহন যে মুক্ত চিন্তাচেতনার আলো জ্বেলে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই আলোতেই ভারতে নব-জাগরনের পথটি ত্বরানিত হয় তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা ও যুক্তিবাদের প্রসারে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, জড়তা, অবিশ্বাস থেকে ভারতবাসীকে মুক্তি দেওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। এইসব কারণে রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথমত "আধুনিক পুরুষ" বলে আখ্যায়িত করা হয়।


রাজা রামমোহন রায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ

রাজা রামমোহন রায়ের লেখা দুটি গ্রন্থের নাম কি?


উত্তরঃ ১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয়ল বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ।


রামমোহন রায়কে রাজা উপাধি কে দেন?


উত্তরঃ দ্বিতীয় আকবর রামমোহন রায়কে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় আকবর 1806-1837 সাল পর্যন্ত মুঘল সম্রাট ছিলেন।



No comments

Do leave your comments

Powered by Blogger.