Header Ads

Header ADS

ডিরোজিও কে ছিলেন? তার নেতৃত্বে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর ? (Who was Derozio? Discuss the aims and objectives of the Young Bengal Movement under his leadership?)

 

ডিরোজিও কে ছিলেন? তার নেতৃত্বে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর ? (Who was Derozio? Discuss the aims and objectives of the Young Bengal Movement under his leadership?)

ডিরোজিও কে ছিলেন? তার নেতৃত্বে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর ? (Who was Derozio? Discuss the aims and objectives of the Young Bengal Movement under his leadership?)

জন্ম ও শিক্ষাঃ- হেনরী লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩২) ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরনের পথিকৃত। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে এক ইউরোপীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ডিরোজিও ছিলেন পর্তুগীজ এবং মা ছিলেন ইংরেজ। ১৮২৬ ডিরোজিও ছিলেন একজন ইউরেশিয়ান। চলতি ভাষায় যাদের ফিরিঙ্গি বলা হত। ধর্মে ছিল খ্রিস্টান। জাতিতে ছিলেন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং মাতৃভাষা ছিল ইংরেজি। তবু ও ডিরোজিও ভারতবর্ষকে নিজের মাতৃভূমি রূপে গ্রহন করেছিলেন।

কলকাতার ধর্মতলা একাডেমিতে পড়ার সময় স্কটিশ শিক্ষক ডেভিড ড্রামন্ডের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এই পরিচয় জিরোজিওর মধ্যে চরমপন্থী যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়। ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ দ্বারা তিনি অনুপ্রানিত হন। এছাড়া ও ভলতেয়ার, হিউম, লক, টম পেইন, রুশো প্রমুখ পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী, দার্শনিকের প্রতি ডিরোজিও আকৃষ্ট হন। ১৮২৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি হিন্দু কলেজের সাহিত্য ও ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তার পাঠদান পদ্ধতি ছিল ভিন্ন রকমের। তিনি গতানুগতিক পদ্ধতি অনুসরণ করতেন না। শিক্ষক হিসেবে তার কর্মকান্ড শুধু শ্রেণী কক্ষে সীমাবদী থাকত না। কলেজ প্রাঙ্গনের বাইরে, নিজের বাসায় ছাত্রদের সঙ্গে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। এই তরুন শিক্ষক ছাএদের মন হতে যুগযুগান্তরের সংস্কারের মূল উৎঘাটন করে মুক্ত বুদ্ধি ও বিশ্বচৈতন্য উদ্বুদধ করেছিলেন।

ডিরোজিও ও  ইয়ংবেঙ্গলঃ ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তাঁদের অন্যতম হয়েছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের শিক্ষক । ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দু কলেজের ছাত্রদের নিয়ে তিনি যে সংগঠন গড়ে তোলেন বাংলার ইতিহাসে তা Young bengal বা নব্যবঙ্গ নামে পরিচিত।

নব্যবঙ্গ আন্দোলন:
পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে এবং মিল- বেত্থাম, টম পেইন, রুশো, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকদের রচনা পাঠের ফলে ডিরোজিওর অনুগামী দের মনে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনষ্কতা, মানবতাবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি চেতনার জন্ম হয়। রিডরোজিওর নেতৃত্বে এই তরুনরা প্রচলিত হিন্দু ধর্ম, ও সামাজিক কুসংকারগুলির বিরুদের যে আন্দোলন শুরু করেন করেন তা " নব্যবঙ্গ " আন্দোলন নামে পরিচিত।

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ জাতীয়তাবাদের মন্ত্র গুরু রাজা রামমোহন রায় ভারতে যে যুক্তিবাদের বীজ বপন করেন ডিরোজিও সেটিকে মহিরুহে পরিণত করার চেষ্টো করেন। তার এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য (লক্ষ্য) ছিল:

১. অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করে ছাত্রদের যুক্তিবাদী ও সত্যসন্ধানী করে তোলা,
2. ছাত্রদের মধ্যে বিজ্ঞানমনষ্কতা ও মানবতাবাদের প্রসার ঘটানো,
৩. প্রচলিত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা কুসংস্কার গুলির বিরুদ্ধে স্বাধীন মতামত প্রদানের ব্যবসথা করে ছাত্রদের মনে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটানো,
4. নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা।
5. সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা।
6. স্বদেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটানো ইত্যাদি।

আর এক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। শিবনাথ শাস্ত্রী তার" রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ " গ্রন্থে শিক্ষক ডিরোজিও সর্ম্পকে বলেছেন, "চুম্বক যেমন লৌহাকে আকর্ষণ করে, তেমনি তিনি ও বালকদিগকে আকর্ষণ করিবেন"। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ছাত্রদের বন্ধু ও পথপ্রদর্শক।

ডিরোজিওর নেতৃত্বে আন্দোলন:

ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য ডিরোজি ও বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

একাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাঃ
প্রচলিত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা কুসংস্কার গুলির বিরুপের স্বাধীন মতামত প্রদানের ব্যবস্থা করে ছাত্রদের মনে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৮২৮ সালে মানিকতলায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশঃ-

ডিরোজিওর " অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের” এর মুখপাত্র ছিল এথেনিয়াম"।  ১৮৩০ সালে প্রকাশিত হয় "পার্থেনন " পত্রিকা। এতে নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
" ডিরোজিও " ক্যালাইডোস্কোপ" পত্রিকার মাধ্যমে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন ।

" এছাড়া " হেসপারাস" ও "ক্যালকাটা লিটারেরি গ্যাজেট" নামে দুটি পত্রিকার সমপাদনা করতেন। এই সমস্ত পত্রিকার মাধ্যমে "সংবাদপত্রের স্বাধীনতার " জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা ও স্বদেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটানোর উদ্যোগ নেন। ভারতের প্রতি গভীর দেশপ্রেমের প্রমান ফকির অব জঙ্গিরা' এবং "আমার স্বদেশের প্রতি " কবিতায় পাওয়া যায়।

ডিরোজিও পরবর্তী আন্দোলনঃ

ডিরোজিওর মৃত্যুর পর তার অনুগামীরা আন্দোলনের হাল ধরেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন " কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল তোর প্যারীচাদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রসিক কৃষ্ণ মল্লিক, তারাচাঁদ চক্রবর্তী প্রমুখ।

সংগঠন প্রতিষ্ঠাঃ

এরা যে সমস্ত সংগঠন গড়ে তোলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাধারন জ্ঞানোপার্জনী সভা (১৮৩৬)'। রাজনৈতিক কার্যকলাপ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ১৮৪৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন " বোল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি",

পত্রিকা প্রকাশ:
অনুগামীদের দ্বারা প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকা ও ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জ্ঞানান্বেষণ ; 'এনকোয়ারার, বেঙ্গল স্পেকটেটর, হিন্দু পাইওনিয়ার"

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের কার্যকলাপ বা কর্মসূচিঃ
ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনকারীরা যে সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেগুলি হলো:
★ খ্রিষ্টান পাদরিদের গোড়ামি,
★স্ত্রী-পুরুষদের মধ্যে বৈষম্য,
★ দাস প্রথা,
★নারী নির্যাতন
★ সংবাদ ও পত্রের স্বাধীনতা
★ ভারতের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা
★কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য  চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
★সর্বপরি সামাজিক ও ধর্মীয় কুপ্রথার বিরুদের প্রতিবাদ করা।

ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা (ব্যর্থতা):
কিছু, অন্তর্নিহিত সীমাবদ্বতার কারণে এই আন্দোলন শেষ পর্যনত ব্যর্থ হয়। এই কারণগুলি হলঃ

১.ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের কোন গঠনমূলক কর্মসূচি  ছিল না। তাদের কিছু চিনতাধারা ও কর্মসূচি ছিল নেতিবাচক। ফলে তারা তেমন জনসমর্থন পাননি।

২. তাঁদের আন্দোলনের শহরকেন্দ্রিক কিছু অভিজাত পরিবারের মধ্যে সীমাবদী ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তদের কোনো যোগসূত্র গড়ে ওঠে নি।।

৩.দেশের দূর্দশাগ্রস্থ কৃষক ও শ্রমজীবি মানুষের সমস্যাবলী তাদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয় নি।

4. এই আন্দোলনের সদস্যরা সীমাহীন প্রগতিশীলতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ ধরনের প্রগতিশীলতার তখন ও সমাজে তৈরি হয়নি।

5. তৎকালীন সমাজের একটি বড় অংশ  ছিল মুসলিম এই আন্দোলনের অধিনা করেনি।

6. সর্বপরি ডিরোজিওর মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের অনেক কর্মী চিরাচরিত ঐতিহ্যে ফিরে যায়।

ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের গুরুত্ব বা তাৎপর্যঃ-
উপরোক্ত কারণে ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। পরবর্তী নেতৃত্বের মধ্যে ও মতপার্থক্য দেখা দেয় ডেভিদ কফ তাদের " ভারতের পুথি পড়া বুদ্ধিজীবী' বলে সমালোচনা করেন। ড. সুমিত সরকার ও এদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে একথা ভুললে চলবে না যে তাঁদের কার্যাবলীকে আপাতদৃষ্টিতে নৈরাজ্যবাদী বলে মনে হলেও বাংলার সমাজ জীবনের তার গভীর প্রভাব পড়েছিল। বাঙালির মধ্যে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনষ্কতা ও কুসংস্কারমুক্ত মানসিকতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।

ইয়ংবেঙ্গল সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উওর :

ইয়ং বেঙ্গল দল কে গঠন করেন?
হেনরী লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দু কলেজের ছাত্রদের নিয়ে তিনি যে সংগঠন গড়ে তোলেন বাংলার ইতিহাসে তা Young bengal বা নব্যবঙ্গ নামে পরিচিত।

ডিরোজিও কে ছিলেন?
হেনরী লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩২) ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরনের পথিকৃত।১৮২৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি হিন্দু কলেজের সাহিত্য ও ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।এই তরুণ শিক্ষক ছাএদের মন হতে যুগযুগান্তরের সংস্কারের মূল উৎঘাটন করে মুক্ত বুদ্ধিও বিশ্বচৈতন্য উদ্বুদধ করেছিলেন।

No comments

Do leave your comments

Powered by Blogger.