Header Ads

Header ADS

বেঙ্গল প্যাক্ট কী?বেঙ্গল প্যাক্টের প্রধান প্রধান ধারাগুলি উল্লেখ কর?(What is Bengal Pact? Mention the main main clauses of Bengal Pact?)

 

বেঙ্গল প্যাক্ট কী?বেঙ্গল প্যাক্টের প্রধান প্রধান ধারাগুলি  উল্লেখ কর?(What is Bengal Pact? Mention the main main clauses of Bengal Pact?)

বেঙ্গল প্যাক্ট কী?বেঙ্গল প্যাক্টের প্রধান প্রধান ধারাগুলি  উল্লেখ কর?(What is Bengal Pact? Mention the main main clauses of Bengal Pact?)

ভূমিকাঃ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ও ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল তা ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছিল।
বেঙ্গল প্যাক্ট ছিল অখন্ড ভারতে হিন্দু-মুসলিম মিলনের সর্বশেষ উদ্যোগ। এ চুক্তির মাধ্যমে চিত্তরঞ্জন দাস বাংলার মুসলমানদের বিভিন্ন দাবি পাওয়া মেনে নেয়। কিন্তু উগ্র হিন্দুরা এর বিরোধিতা করে।

বেঙ্গল প্যাক্টঃ- এটি বাংলার হিন্দু-মুসলমান ঐক্য প্রচেষ্টার চুক্তি এর উদ্দেশ্য ছিল। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদাসের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বিভেদের সমাধান করা। ১৯২২ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মতিলাল নেহেরুর সাথে একটি দল গঠন করে যার নাম "স্বরাজ্য" দল। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে এই স্বরাজ পার্টি উল্লেযোগ্য সফল্য অর্জন করে। বঙ্গীয় আইনসভায় মুসলিম সদস্যদের স্বকীয় অংশ গ্রহনের জন্য চিত্তরঞ্জন দাস মুসলিম নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এক চুক্তি সম্পাদনের ব্যবস্থা করেন৷ যা 'বেঙ্গল প্যাক্ট' নামে পরিচিত। ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর  "স্বরাজ্য" দলীয় সদস্যদের সভার এ চুক্তি অনুমোদন লাভ করে।

১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট এর ধারাসমূহঃ-

১৯২৩ সালের Bengal pact এর প্রধান প্রধান ধারাসমূহ বা শর্তসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:-

১.আইনসভা গঠন:-এই সভায়  চুক্তিতে বলা হয় বঙ্গীয় আইনসভায় হিন্দু- মুসলমানদের মধ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে।

. প্রতিনিধি নির্বাচন: এই চুক্তির ধারা অনুযায়ী বঙ্গীয় আইনসভায় ১৯০৯ সালের আইন প্রবর্তিত পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে, অর্থাৎ আইনসভার প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত 'স্বতন্ত্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে।

৩.স্বায়ওশাসিত প্রতিষ্ঠানঃ- স্থানীয় স্বায়ওশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের শতকরা ৬০ ভাগ এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায়ের শতকরা ৪০ ভাগ প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

৪.চাকরিতে সমতা: সরকারি চাকরিতে শতকরা ৫৫% পদ পাবে মুসলিমরা - যতদিন না পর্যনত মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চাকরি লাভের ক্ষেত্র একই অনুপাতন অর্জিত হয় ততদিন পর্যনত মুসলিমরা শতকরা ৮০ ভাগ পদ পাবে এবং হিন্দুরা পাবে ২০ ভাগ।

৫.সরকারি বা চাকরিঃ চাকরির ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সমতা অর্জনের পর থেকে মুসলমান জনগণ চাকরির শতকরা ৪৫ ভাগ পাবে এবং অমুসলিম চাকরির শতকরা ৪৫ ভাগ এবং অমুসলমান গণ শতকরা অন্তবর্তীকালীন সময় হিন্দু জনগণ ২০ ভাগ চাকরি পাবেন।

.ধর্মীয় অনুভূতিঃ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন কোন আইন সংসদে পাস করা যাবে না। ধর্ম সংক্রান্ত আইন পাস করতে হলে আইনসভার নির্বাচিত অংশ সদস্যাদের সমর্থন থাকতে হবে।

৭. ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞাঃ এ চুক্তিতে বলা হয় কোনো মুসলিম মসজিদ অতিক্রম করার সময় কোনো শোভাযাত্রা সঙ্গীত বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদধ। কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মুসলমাদের গো-হত্যা নিষেধ করা যাবে না। তবে তা উন্মুক্ত স্থানে না করাই ভালো। এ চিক্তির প্রায় সবগুলো শর্ত আপাত দৃষ্টিতে মুসলিমদের অনুকূলে ছিল ।

চিত্তরঞ্জন দাস আইনসভায় বলেন,
প্রধান স্বরাজ্যের বুনিয়াদ রচনা আমাদের লক্ষ্য। স্বরাজ লাভের পর আমাদের সরকার না মুসলমান সরকারের না হিন্দু সরকার এরুপ কোন সংশয় মতে। আমাদের মনে জাগ্রত না হয় সেজন্য আমরাএএ চুক্তিতে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ন্যায়সংগতকে প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ করি।

গুরুত্বঃ
বাংলার হিন্দু -মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলা চুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ চুক্তি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এ চুক্তির ফলে স্বরাজ দল - অবিভক্ত বাংলার আইন পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম আসলে ২১ টি এলাকায় ৩৬টি আসন লাভ করে। এছাড়া পরের বছর কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। নির্বাচনের ফলাফল অনুসারে লর্ড লিটন চিত্তরঞ্জনকে মন্ত্রিসভা গঠন করার আমন্ত্রণ জানান কিন্তু লিটনের আমন্ত্রণ তিনি প্রত্যাখান করেন। কেননা তিনি ১৯১৯ সালে দ্বৈত শাসন ব্যবথাকে অচল করতে চেয়েছিলেন। এ চুক্তি বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার সর্ম্পকে সচেতন করে। বাংলার মুসলিম সম্প্রদায় ততে লাভবান হয় । এ চুক্তি মুসলমান নেতৃত্বের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। যার ফলে পরবর্তী সময়ে মুসলমানরা নিজেদের স্বতন এ আবাসভূমির কথা চিন্তা করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার হিন্দু মুসলিম রাজনীতিতেতিতে ও সামাজিক সহযোগিতা স্থাপনের ক্ষেত্রে বেঙ্গল প্যাক্টের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ চুক্তিতে মুসলমানদের প্রতি সদাচরণ ন্যায্য অধিকার ধর্মীয়ভাবে শ্রদধা প্রদর্শন করা হয়। চিত্তরঞ্জন দাসের শর্ত টিকিয়ে রাখেলে সৃষ্টি হতো না হিন্দু মুসলিম দুটি সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের।


বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর :

বেঙ্গল প্যাক্ট কার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তরঃ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এর উদ্যোগে স্বাক্ষরিত হয়।

 
বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয় কত সালে?
উত্তরঃ ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে যা বাংলার মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক পার্থক্যজনিত সমস্যা সমাধানকল্পে সম্পাদিত হয়েছিল। 

No comments

Do leave your comments

Powered by Blogger.