1911-1923 সাল পর্যন্ত হিন্দু মুসলিম ঐক্য প্রচেষ্টা ?
প্রশ্ন:1911-1923 সাল পর্যন্ত হিন্দু মুসলিম ঐক্য প্রচেষ্টা ?
উত্তর :
ভূমিকাঃ- ভারতীয় উপমহাদেশে অন্যতম প্রধান দুই সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমান। এই দুই সম্প্রদায়ের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়েছিল। এর পূর্বে ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বংগভংগ ঘোষনা করেন। ফলে রাজধানী দিল্লি থেকে ঢাকায় স্থাপন করা হয়। ১৯১১ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ বংগভংগ রদ করেন। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে হিন্দু -মুসলিম সর্ম্পক নষ্ট হয়। বিভিন্ন রাজনীতিবিদরা অনুধাবন করেন হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে সর্ম্পক ভালো না হলে স্বায়ত্তশাসন সম্ভব নয়। হিন্দু-মুসলিম মধ্য প্রচেষ্টার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:-
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মুসলিম লীগে যোগদানঃ- মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯১০ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন ৷ এ সময় মুসলিম রাজনীতি কিছুটা উন্নতি লাভ করে। তিনি হিন্দু মুসলিম ঐক্য প্রচেষ্টায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এ মুসলিম লীগে যোগদানের মাধ্যমে। আলী জিন্নাহ
একে ফজলুল হকের আবির্ভাব : বাংলার কৃষক, শ্রমিক, নিরীহ মানুষের সাথে ফজলুল হবোর নিবিড় সম্পর্ক। তিনি ছিলেন কৃষক শ্রমিক পার্টির নেতা। বাংলার রাজনীতিতে প্রগতিশীল সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার জোয়ার আসে।
বহিঃবিশ্বের কয়েকটি ঘটনাঃ- মুসলিম রাজনীতিতে বহিঃবিশ্বের কিছু ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে৷ সেগুলো হলো :
১. ইতালি কর্তৃক ট্রিপলি অধিকার,
২.বলকান যুদেধ তুরস্কের প্রতি ব্রিটিশ আচরন
৩.ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সরকারের গড়িমসী,
হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতিতে গোপাল কৃষ্ণ গোখলের ভূমিকাঃ- এই সময় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে সর্ম্পক বাড়াতে বোম্বের উদারনৈতিক নেতা গোপাল কৃষ্ণ গোখলে উপলব্ধি করেন যে মুসলমানদের সহযোগিতা ও সমর্থন ব্যতিত কংগ্রেসের স্বায়ত্তশাসনের দাবি সরকারের কাছে কোনো রুপ গুরুত্ব বহন করে না। ১৯১৫ সালে তার অকাল মৃত্যুতে ভারতের প্রগতিশীল রাজনীতি দূর্বল হয়ে পড়ে।
লক্ষ্ণৌ চুক্তিঃ ১৯১৬ সালে কংগ্রেস ও মুসলিমদের মধ্যে সম্পাদিত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি । এটি মুসলিমদের জন্য বিরাট সাফল্য। কেননা এই চুক্তি দেশের জন্য স্বায়ত্তশাসন ও ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিটি প্রদেশের জন্য আইনসভায় মুসলিমদের কিছু সুবিধা দেওয়া হয় । মুসলমানদের নির্দিষ্ট আসনে কেবলমাত্র মুসলমানরাই ভোট দিবে । রাজনীতিতে মুসলিমদের স্বতন্ত্র অধিকারের দাবি কংগ্রেস স্বীকার করে নেয়।এতে মুসলমানরা আলাদা ভোটের অধিকার পায় যা মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মন্টেগণু চেমসফোর্ড আইন:-
১৯১৯ সালে চেমসফোর্ড আইন সম্পাদিত হয় এই আইনের মাধ্যমে সরকার কিছুটা দায়িত্বশীল সরকার গঠনের প্রয়াস পান।
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন: ভারতীয় মুসলমানরা প্রথম বিশ্বযুদেধ তুর্কি সাম্রাজ্যের অখন্ডতা রক্ষার জন্য যে আন্দোলন গড়ে তোলেন তাকে খিলাফত আন্দোলন বলে। ১৯১৯ সালে ১৭ অক্টোবর খিলাফাত দিবস পালিত হয়। এই সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন মহাত্ন গান্ধী। মহাত্ন গান্ধী গড়ে তোলেন অসহযোগ ও গ্রহণ করেন এবং । ১৯২০ সালে গান্ধিজী অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলেন।অসহযোগ ও খিলাফত এক হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। সরকারি শিক্ষা
দিবস পালিত হয়। এ সময় কংप्रंিমের নেতৃত্বে ছিলেন মহাআী।মহাআগান্ধী ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলেন! অমহযো97 ও খিলাফত আন্ােলন তখন এক হয়ে বিভিন্নকমসূচি এহণ করে। আসহযোध আন্দোলনমূলত সরকারকে সরকারি কমকান্ত সহযোগীতা না করা। নরকারি বিভিন্ন চঙি অনেকে ত্যাস করে। সরকারি বিভিন্ন চাকরি বদন, শিা- পতিষ্ঠান হতে শিকদের শখ, শিকদের শিা পতিষ্ঠান তাগ, বিচারপতি যা উকিল লদের বিচারকেন বা দালত তাF বিলেতে খাদy পরিহার ইত্যাদি অমহযোগ আন্দোলনের ফলে ঘটে। এ আন্দোলনের আরও একটি শত ছিল অহিংস নীতিসহন। কিদু -এ আন্দোলন এ সময় হিংসাত্মক রূপ নেম। ১৯২২ সালে মহাজাচীপে মেতার করা হয়। ফলে এ আন্দোলন ধীরে ধীরে ग्रंথ হয়ে পড়ে।
অসহযোগ আন্দোলন: মূলত সরকারকে সরকারি কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা না করা। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, আইন আদালত, শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং বিলাতি পণ্য বর্জন করে।এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন চুক্তি অনেকে ত্যাগ করে। এই আন্দোলনের একটি শর্ত অহিংস নীতি গ্রহন। কিন্তু পরবর্তীতে - এই আন্দোলন অহিংস আন্দোলনে রুপ নেয়। ১৯২২ সালে গান্ধীজিকে গ্রেপ্তার করা হয় । ফলে এ আন্দোলন ধীরে ধীরে শ্লথ হয়ে পড়ে।
বেঙ্গল প্যাক্টঃ- এটি বাংলার হিন্দু-মুসলমান ঐক্য প্রচেষ্টার চুক্তি এর উদ্দেশ্য ছিল। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদাসের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বিভেদের সমাধান করা। ১৯২২ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মতিলাল নেহেরুর সাথে একটি দল গঠন করে যার নাম "স্বরাজ্য" দল। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে এই স্বরাজ পার্টি উল্লেযোগ্য সফল্য অর্জন করে। বঙ্গীয় আইনসভায় মুসলিম সদস্যদের স্বকীয় অংশ গ্রহনের জন্য চিত্তরঞ্জন দাস মুসলিম নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এক চুক্তি সম্পাদনের ব্যবস্থা করেন৷ যা 'বেঙ্গল প্যাক্ট' নামে পরিচিত। ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর "স্বরাজ্য" দলীয় সদস্যদের সভার এ চুক্তি অনুমোদন লাভ করে। এ চুক্তির শর্তাবলী হলো:-
১.জনসংখ্যার অনুপাতে প্রধান সম্প্রদায় গুলোর জন্য আসন নির্ধারণ করে স্বতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যমে আইন সভার প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে।
২.স্থানীয় পরিষদগুলোর মধ্যে সংখ্যাগুরুদের জন্য৬০% এবং সংখ্যালুঘুদের জন্য ৭০% আসন নির্ধারণ করা হয়।
৩.সরকারি চাকরিতে শতকরা ৫৫%, পদ পাবে মুসলমানরা। যতদিন না পর্যনত মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চাকরি লাভের ক্ষেত্র একই অনুপাত অর্জিত হয় ততদিন পর্যন্ত মুসলিমরা শতকরা ৮০ ভাগ পদ পাবে এবং হিন্দুরা পাবে ২০ ভাগ।
৪. কোনো সম্প্রদায়ে ৭৫%, সম্মতি ছাড়া ব্যতীত ঐ সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো আইন পাশ করা যাবে না।
৫.মসজিদের সামনে দিয়ে উচ্চসরে বাদ্যযন্ত্র সহ শোভাযাত্রা করা যাবে না।
৬. ধর্মীয় প্রয়োজনে গরু জবাইকে বাধা দেওয়া যাবে না আবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমনভাবে গরু জবাই করা যাবে না।
" সাম্প্রদায়িক বিভেদের সমাধান করা " বেঙ্গল প্যাক্ট এর মূল উদ্দেশ্য।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার হিন্দু মুসলিম রাজনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা স্থাপনের ক্ষেত্রে উপরোক্ত কার্যক্রম গুলো গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। উপরোক্ত চুক্তিতে মুসলমানদের প্রতি সদাচরণ, ন্যায্য অধিকার, ধর্মীয়ভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। চিত্তরঞ্জন দাসের শর্ত টিকিয়ে রাখলে সৃষ্টি হতো না হিন্দু মুসলিম দু'টি সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের ।
চিত্তরঞ্জন দাশ বলেন:
হিন্দুরা যদি মুসলমানের মনে আস্থা সৃষ্টি করিতে না পারে, তবে হিন্দু-মুসলিম-ঐক্য আসিবে না। হিন্দু-মুসলিম-ঐক্য ব্যতীত আমাদের স্বরাজের দাবি চিরকাল কল্পনার বস্তুই থাকিয়া যাবে।
পোস্ট ট্যাগ :
#হিন্দুমুসলিমঐক্য#বেঙ্গল প্যাক্ট#অসহযোগআন্দোলন#খিলাফতআন্দোলন#1911-1923 সালপর্যন্তহিন্দুমুসলিমঐক্যপ্রচেষ্টা
No comments
Do leave your comments