Header Ads

Header ADS

যে অবস্থার প্রেক্ষিতে লর্ড মেকলে তার মিনিট প্রণয়ন করেছিল তা আলোচনা কর ? লর্ড মেকলে যে মিনিট জমা দিয়েছিলেন তার ফলাফল কী হবে ?

 





যে অবস্থার প্রেক্ষিতে লর্ড মেকলে তার মিনিট প্রণয়ন করেছিল তা আলোচনা কর ? লর্ড মেকলে যে  মিনিট জমা দিয়েছিলেন তার ফলাফল কী হবে ?

সূচনাঃ ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এদেশে একটি সুনিষ্টি শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ঘটানো বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে প্রাচ্য শিক্ষা নাকি পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগ নেবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পূর্বে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে দ্বন্দ দেখা দেয়। এদেশীয় পণ্ডিতরা। প্রাচ্য শিক্ষার এর প্রবর্তনের কথা বললেও ইংরেজরা এদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের দাবি করেন।
মেকলে মিনিট বা মেকলে প্রস্তাব কি :

টমাস ব্যাবিংটন এডওয়ার্ড মেকলে ছিলেন একাধারে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আইন সচিব এবং "committee of public instructions এর সভাপতি। তিনি প্রাচ্যশিক্ষার পরিবর্তে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিষয়ে যে বিখ্যাত প্রস্তাব পেশ করেন (১৮৩৫ সালে) তা মেকলে মিনিটস বা মেকলে প্রস্তাব নামে পরিচিত। তিনি ভারতে বিজ্ঞান ও সাহিত্য সর্ম্পকে তার মূল্যায়ন ছিলো :
"A single sell of a good, European library is worth the whole literature of India and Arabica".

"ইউরোপের একটি ভালো গ্রন্থাগারের বই ভর্তি একটি তাক ভারত ও আরবের সমগ্র সাহিত্যের সমান"।

পাবলিক ইনস্ট্রাকশন কমিটি গঠনঃ
ইংল্যান্ডে হুইগপন্থী দলের সদস্য লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক বেন্থামের উপযোগবাদে বিশ্বাস করতেন । তিনি মনে করতেন যে, ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ভারতে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে পারলে ভারতবাসীর আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক মান উন্নত করা সম্ভব । পাশ্চাত্য শিক্ষার সুষ্ঠু প্রসারের লক্ষ্যেই বেন্টিঙ্ক মেকলের সভাপতিত্বে গঠন করেন ‘কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন ‘।

মেকলের কার্যক্রমঃ
তিনি ভারতে ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৮ খ্রিঃ পর্যন্ত, মাত্র ৪ বছর ছিলেন। কিন্তু এই চার বছরের মধ্যে তিনি ভারতে Thomas Babington Macaulay অসাধারণ দুটি কাজ করে যান, যেগুলি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে প্রায় শত বৎসর ব্যাপী স্থায়িত্ব প্রদান করেছিলো।

• মেকলের এই অসাধারণ দুটি কাজের মধ্যে প্রথমটি ছিলো, ভারতীয় দন্ড বিধি বা ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের রূপায়ন করা।

• দ্বিতীয় টি ছিলো ভারতে শিক্ষা বিস্তারের সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতি ও পদ্ধতির ঘোষনা করা।

মেকলে মিনিটের মূল বক্তব্য / মেকলের প্রস্তাব:

মেকলে তার প্রতিবেদনে বলেন -
★প্রাচ্যের শিক্ষা বৈজ্ঞানিক, চেতনাহীন এবং পাশ্চাত্যের তুলনায় নিকৃষ্ট।

★প্রাচ্যের সভ্যতা “দুর্নীতিগ্রস্থ এবং অপবিত্র”। তাই এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিৎ।

★এদেশের উচ্চ ও মধ্য বিত্তদের মধ্যে ইংরেজী শিক্ষার প্রসার ঘটলে “ক্রম নিন্ম পরিশ্রুত নীতি" বা চুঁইয়ে পড়া নীতি অনুসারে তা ক্রমশ সাধারন দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

★মেকলের মতে ভারতে ইংরেজি ভাষা প্রবর্তিত হলে ব্রিটিশদের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মচারী নিয়োগ করা সহজ হবে।

★মেকলের লক্ষ্য ছিল, পাশ্চাত্য শিক্ষার ফলে এমন এক ভারতীয় গোষ্ঠী তৈরি হবে তারাই পরে জনগণের মধ্যে নতুন জ্ঞান প্রচার করবে এবং ইংরেজি শিক্ষার ফলে
ভারতে নবজাগৃতি আসবে। মেকলে প্রস্তাব অনুযায়ী ১৮৩৫ সালের ৭ই মার্চ লর্ড বেন্টিঙ্ক ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি নীতি রূপে ঘোষণা করেন।

★মেকলে মিনিটের দ্বারা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষা সংক্রান্ত দীর্ঘ বিতর্কের নিরসন হয় এবং ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার সম্পর্কে যাবতীয় সংশয়, ও দ্বিধা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।

★“প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষা” সংক্রান্ত বিতর্কে পাশ্চাত্যবাদীদের জয় সুনিশ্চিত হয়।

★মেকলের শিক্ষা নীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ভারতে পরবর্তী কালে পোশাকে আশাকে একটি ইংরেজ অনুগত শ্রেনী গড়ে ওঠে।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব:

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার নিয়ে পাবলিক ইনস্ট্রাকশন কমিটির সদস্যরা দুভাগে ভাগ হয়ে যান । প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট, যথা - উইলসন, কোলব্রুক, এইচ . প্রিন্সেপ প্রমুখ চান ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শনকেই উন্নত করা হোক । অপরদিকে পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্টরা, যথা – আলেকজান্ডার ডাফ, সান্ডার্স, কোলভিন প্রমুখ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে চান ।

মেকলে মিনিট এর ফলাফলঃ

মেকলে সংস্কৃত কলেজসহ সকল প্ৰাচ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি । তবে তাঁর প্রস্তাব মেনেই বেন্টিঙ্ক ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি নীতিরূপে ঘোষণা করেন ( ১৮৩৫ খ্রি . ৭ মার্চ ) । এরপরেই কলকাতায় মেডিকেল কলেজ ( ১৮৩৫ খ্রি.), রুরকিতে রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মাদ্রাজে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাইস্কুল, বোম্বাইতে এলফিনস্টোন ইন্সটিটিউশন গড়ে ওঠে ।

★সরকারি কাজে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত হয় ( ১৮৩৭ খ্রি.)।
★ ইংরেজি ভাষার দক্ষ ব্যক্তিরা সরকারি কাজে অগ্রাধিকার পাবে বলে ঘোষণা করা হয় ।
★ইংরেজি ভাষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় মাতৃভাষায় শিক্ষাদান পদ্ধতি অবহেলিত হয় ।

মেকলে মিনিট এর মন্তব্যঃ
মেকলে মিনিট ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে নবদিগন্ত উন্মোচন করে । সমাজের উচ্চবর্গের ভারতীয়দের মাধ্যমে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা চুঁইয়ে পড়ে (ইনফিলট্রেশন থিয়োরি ) সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের কাছে না পৌঁছালেও নীচু তলায় আধুনিক চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল । আসলে মেকলে চেয়েছিলেন, 

যে এমন এক শ্রেণীর ভারতীয় তৈরি করতে যারা বর্ণে ও রক্তে হবে ভারতীয়, কিন্তু ভাবনা ও রুচিতে হবে ইউরোপীয় (‘ Indian in blood and colour, but English in tastes, in opinions, and in morals and intellect ')।

মূল্যায়ন:মেকলে মিনিটের ফলে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের সপক্ষে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।

No comments

Do leave your comments

Powered by Blogger.