মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনা কি? মাউন্ট ব্যাটেন পরিকলপনার বৈশিষ্ট্য?
মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনা কি? মাউন্ট ব্যাটেন পরিকলপনার বৈশিষ্ট্য?
মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনাঃ স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় ভারতবাসীর তীব্র সংগ্রাম বিট্রিশ রাজকে ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নের মীমাংসা করতে বাধ্য করে । হিন্দু মুসলমানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ভারতবর্ষ যখন আতঙ্কিত তখন ভারতের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে ব্রিটিশ সরকার দেশভাগের অনিবার্যতা স্বীকার করে নেয়। এই পট ভূমিকায় 1947 খ্রিস্টাব্দের ২১ মার্চ ভারতের বড়লা হয়ে আসেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন। তিনি 24 মার্চ ভাইসরয় হিসেবে। দায়িত্ব গ্রহণ করে ভারত বিভাগের একটি পরিকল্পনা রচনা করেন। এবং ও জুন সেই পরিকল্পনার প্রস্তাবগুলি ঘোষনা করেন। তার প্রস্তাবিত ঘোষনা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (Mountbatten plan) নামে পরিচিত।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মূল বিষয় বা প্রস্তাবসমূহঃ
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মার্চ লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ভারতের বড়লাটের কার্যভার গ্রহণ করেন। বহু বজায় রাখতে ব্যার্থ সস্পষ্টভাবে ভারত হন এবং করে ও তিনি ভারতের অবশেষে ৩রা জুন তিনি তা বিভাগের ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনা " মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা / প্রস্তাব বা মাউন্টব্যাটেন বোয়েদাদ নামে পরিচিত(Mountbatten Award)। মাউন্টব্যাটেন পরিকলপনার চূড়ান্ত পরিনাম হলো দেশভাগ।
এ প্রসঙ্গে ড. বিপান চন্দ্র বলেছেন:-
" আমরা এটা ভুলে গিয়েছিলাম যে, ১৯৪৭ এ নেহেরু, প্যাটেল ও গান্ধিীজি শুধু যা অবশ্যম্ভাবী তাকেই মেনে নিয়েছিলেন।
"It was forgotten that Nehru, patel and Gandhiji in 1947 were Only accepting what had become inevitable"
মাউন্টব্যাটেনের বিভিন্ন প্রস্তাবঃ
১. মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে বলা হয় ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্থান নামে দুটি ডোমিনিয়নের সৃষ্টি করা হবে' ডোমিনিয়ন দুটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক বিষয়সমূহ পরিচালনা করবে।
২.মুসলমান প্রধান প্রদেশ সিন্টু, বিট্রিশ বালুচি খান, উত্তর-পশ্চিম সীমানত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে " পাকিথানা গড়া হবে।
৩. পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করে কোন অঞ্চলকে কোথায় যুক্ত করা হবে তা নির্ধারনের জন্য ডোমিনিয়নের একটি " সীমানা নির্ধারণ কমিশন" ক্ষমতা হস্তানতরের আগেই গঠিত হবে।
৪. আসামের শ্রীহট্ট জেলা কোন ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে অ গণভোটে স্থির হবে।
৫.দেশীয় রাজাগুলি নিজ নিজ রাজ্যে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করবে এবং ইচ্ছা করলে তারা যে কোনো ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে।
৬.প্রতি ডোমিনিয়নের নির্বাচিত গণপরিষদ এলাকার সংবিধান রচনা করবে। যতদিন না সংবিধান রচিত হচ্ছে ততদিন ব্রিটিশ সরকার নিযুক্ত একজন গভর্নর জেনারেল এই ডোমিনিয়নে থাকবেন।
৭.স্বাধীনতা লাভের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কোনো ও ব্রটিশ পার্লামেন্টের কোনো আইন ওই দুই ডোমিনিয়নে বলবৎ থাকবে না। প্রতি ডোমিনিয়নে নির্বাচিত আইনসভা নিজ নিজ দেশের জন্য আইন র রচনা করবে।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার পটভূমিঃ
মাউন্টব্যাটেনের আগমন:- ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ দ্রুত সম্পাদনের জন্য পার্লামেন্টে লর্ড ওয়াভেলের জায়গায় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনকে ২৪ই মার্চ ১৯৪৭ সালে ভাইসরয় নিয়োগ করে ভারতে পাঠায়।
লর্ড মাউন্টব্যাটেনের 'লক্ষ্যঃ
মাউন্ট ব্যাটেনের লক্ষ্য ছিল অখন্ড ভারত। তাই ২৪ থেকে জন্মের মধ্যে তিনি ভারতীয় নেতৃমণ্ডলী ও রাজন্যবর্গের সর্ভের ১৩৩টি বৈঠক করেন। কিন্তু শেষ পর্যনত এই নতুন৷ ভাইসরয় বুঝে নেন যে, ভারত বিভাগ ছাড়া ভারশতীয় সমাস্যার কোনো সমাধান নেই। এ কাজে বিলমব হলে পাঞ্জাব, বাংলাসহ বহুখানে হিংসার 'সামপ্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়বে আশংকা করে। এজন্যে মে মাসে তিনি ইংল্যান্ড যান
এবংব্রিটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে ৩রা জুন তিনি ভারত বিভাগের সিদ্ধানত ঘোষণা করেন। তিনি জানান সম্ভবত ১৫ আগস্টের (১৯৪৭) মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে ।। এই পরিকল্পনা মাউন্টব্যাটেন "প্রস্তাব বা রোয়েদাদ" নামে খ্যাত।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহঃ-
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ দ্রুততার সাথে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
১.ভারতীয় গনপরিষদের সংবিধান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশুগুলি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
২.তাদের নিজস্ব বিধানসভাগুলি কীভাবে পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করা হবে এবং কোন গণপরিষদের ব্যক্তি এতে যোগ দেবে সে সর্ম্পকে কথা বলবে।
৩.পৃথক স্থানপরিষদের প্রশ্নে গিরীত নেবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলি প্রতিটি প্রদেশে একটি বাউন্ডারি কমিউনিজম দ্বারা চূড়ান্ত বর্ণনা রেখা নির্ধারণ করা হবে।
৪.সিন্ধ বিধানসভা, বর্তমান গণপরিষদে থাকবে নাকি পরবর্তী গণপরিষদে যোগ দেবে তা নিয়ে ভোট হবে। 1947 সালের 15 ই আগষ্টের মধ্যে ভারতকে ক্ষমতা দেওয়ার কথা ছিল।
নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়াঃ-
গান্ধীজির প্রতিক্রিয়াঃ মৌলানা আজাদ, গান্ধীজি, আব্দুল গফ্ফার খান কংগ্রেসী নেতা প্রথমদিকে মাউন্টব্যাটেন পরিকলপনা ও দেশবিভাগের তীব্র বিরোধী ছিলেন।গান্ধিজী বলেন,
" ভারত বিভাগ হতে পারে কেবলমাত্র আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে।"
অবশ্য ক্রমে গান্ধীজি বুঝতে পারেন যে - পরিস্থিতি অনুযায়ী শোবিভাগ অনিবার্য।
মৌলানা আজাদের প্রতিক্রিয়াঃ-
মৌলানা আজাদের মতে,
"দেশভাগ হলো এক দৈব দুর্বিপাক।এবং তার মতে ভারত ভাগ হলে কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরাজয়ের শামিল।
প্যাটেল ও রাজেন্দ্র প্রসাদের বক্তব্যেঃ-
প্যাটেল মনে করেছিলেন যে, " দেশবিভাগই ছিল সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ) । There is no alternative to divide"
ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের মতে,
" গৃহযুদ্ধের চেয়ে দেশ ভাগ ভালো"
মুহাঃ আলী জিন্নাহ বলেন:
"মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় ঘোষিত পাকিস্থান আসলে বিকলাঙ্গ ও কীটদগ্ধ"।
উপসংহার:- ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে ভারতবর্ষের যে সূর্যাস্ত ঘটেছিল, ১৯০ বছর পরে বহু রক্তঝরা সংগ্রামের পর সেই স্বাধীনতার সূর্যোদয় ঘটে। কিন্তু ঐক্যবাদী ভারত দ্বিখন্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। কমিউনিস্ট পার্টি তাই সমালোচনার সুরে বলে,
ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায় ! ভুলো মাৎ,ভুলো মাৎ (এই স্বাধীনতা মিথ্যা ভূলো না, ভূলে না),
ড.অমলেশ ত্রিপাঠী বলেছেন; " ভারতবর্ষের স্বাধীনতা মিথ্যা না হলেও তা জন্মসূত্রে প্রতিবন্ধী।
পোস্ট ট্যাগ:
#মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনা#মাউন্ট ব্যাটেন পরিকলপনার বৈশিষ্ট্য
No comments
Do leave your comments