Header Ads

Header ADS

ওয়ারেন হেস্টিংসের সংস্কার সমূহ পর্যালোচনা কর?(Review the reforms of Warren Hastings)

 


ওয়ারেন হেস্টিংসের সংস্কার সমূহ পর্যালোচনা কর?(Review the reforms of Warren Hastings)

ভূমিকাঃ- ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ বেনিয়া শ্রেনী বাংলার নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা হাতে পান। ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলায় দ্বৈতশাসন কায়েম করে। । ফলে বাংলার মানুষ শোষণ, নির্যাতন ও অত্যাচারের বস্তুতে পরিণত হয়। এরপর ভেরেলেস্ট এবং কার্টিয়ার পাঁচ বছর গভর্নর হিসেবে বাংলার শাসনভার পরিচালনা করেন। দ্বৈতশাসনের ফলে বাংলায় অত্যাচার ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
বাংলার শাসনব্যবস্থাকে এ সময় পূর্বের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন ছিল একজন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাক্তির। এমতাবস্থায় ইংরেজ কোম্পানি ইংল্যান্ড কতৃপক্ষ ওয়ারেন হেস্টিংসকে গর্ভনর জেনারেল হিসেবে ভারতবর্ষে পাঠান। তিনি ভারতবর্ষে আসার পর বিচার, শাসন,রাজস্ব, বাণিজ্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে সংস্কার করেন।
বিচার সংস্কার:
দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন:তিনি প্রতিটি জেলায় একটি করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করেন। দেওয়ানি বিচারের ভার থাকে কালেক্টরের হাতে। ফৌজদারী এর ভার থাকে দেশীয় বিচারকদের হাতে।
সদর দেওয়ানি ও নিজামত আদলত: কলকাতায় একতর আলামত বিচারের জন্য কলকাতায় সদর দেওয়ানি আদালত ও সদর নিজাম আদালত স্থাপিত হয়। তেলো "আদালতের আপিল  সদর দেওয়ানি আদালতে মামলার বিচার করতেন এ গর্ভনর জেনারেল ও তার পরিষদের ২জন, ৩) সদর নিজামত আদালত: প্রধান বিচারপতি বাংলার নবাব দ্বারা মনোনিত হতেন।

বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতাঃ- ওয়ারেন হেস্টিংস বিচারকদের উপঢৌকন ও ঘুষ গ্রহণ বাতিল করেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য তাদের নিয়মিত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

সুপ্রীম কোট প্রতিষ্ঠাঃ হেস্টিংসের আমলে Regulating Act (73) অনুযায়ী ১৭৭৪ সালে Suprime court প্রতিষ্ঠিত হয় ।
প্রশাসনিক সংস্কারঃ-
(দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান):
বাংলার শাসনভার হাতে পেয়ে প্রথমেই তিনি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান। এবং রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব সরাসরি কোম্পানি গ্রহন করে । নায়েব রেজা খাঁ ও সিতাব রায় পদচ্যুত করে হন এবং এই ২টি পদ বিলোপ করা হয়। বাংলার নবারের বাৎসরিক ভাতা ৩২ লক্ষ থেকে কমিয়ে ১৬ লক্ষ টাকা করা হয়। সরকারি কোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়।
রাজস্ব সংস্কারঃ-
৫ শালা বন্দোবস্ত:-
রাজস্ব আদায়ের জন্য গভর্নর ও তার কাউন্সিলের চারজন সদস্যকে নিয়ে ১টি "ভ্রাম্যমান কমিটি" বা'committee of circuits' গঠিত হয় (১৪মে১৭৭২)। এই কমিটি জেলার জেলায় ঘুরে রাজস্ব ইজারাদারদের নীলামে জমি বন্দোবস্ত দেয়। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ কর দিতে রাজি হয় তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত এই ব্যবস্থা ইজারাদারী ব্যবস্থা" বা ৫ শালা বন্দোবসত বা (১৯৭২-৭৭) নামে পরিচিত। ইতি পূর্বে সুপারভাইজার” নামক কর্মচারীরা কোম্পানির রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় তদারকী করত। হেস্টিংস এদের নামকরণ করেন কালেক্টর।

ত্রুটি ও একশালা বন্দোবস্ত :- পাঁচশালা বন্দোবস্ত নানা অসুবিধা দেখা দেয়।
১.অসাধু ইজাদাররা বহুক্ষেত্রে বেশি রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রজাদের অত্যাচার করত।
২. নীলামের মাধ্যমে জমি ইজারা দেওয়ার ফলে চিরাচরিত জমিদাররা অনেকেই জমিদারচ্যুত হন এবং স্থান দখল করে ভূঁইফোড় ইজারাদার।
৩.নবনিযুক্ত ইজারাদাররা বহু ক্ষেএেই কোম্পানিকে রাজস্ব দিত না। এর ফলে কোম্পানিকে এর আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জমিতে ইজারাদারদের স্বত্ব অনিশ্চিত হওয়ায় তারা জমি ও কৃষকের উন্নতির দিকে নজর দিত না।
এইসব অসুবিধা দূর করার জন্য হেস্টিংস ১৭৭৭ সালে একসালা বন্দোবস্ত চালু করেন৷ এই ব্যবস্থায় প্রতি বছর নীলামের মাধ্যমে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হত।এই ব্যবস্থা ও প্রজার পক্ষে মংগলজনক হয়নি।

পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কার: ১৭৬৫ সালে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে পুলিশী ব্যবস্থার অবলুপত হয় । এমতাবস্থায় হেস্টিংস এর সংস্কার করেন:-
১.তিনি বাংলা ও বিহারকে যথাক্রমে দশ ও আটটি ফৌজদারী জেলায় বিভক্ত করা হয়।
২.প্রত্যেক জেলায় একটি করে ফৌজদারী ও থানা স্থাপিত হয় ।এবং এতে ১ জন করে দেশীয় ফৌজদার নিযুক্ত করা হয় ।
৩.ফৌজদাররা ছিলেন জেলার প্রধান পুলিশ কর্মচারী এবং জেলার শান্তিরক্ষার সকল দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত ছিল।
৪.প্রত্যেক থানায় ১টি জেলখানা স্থাপন।

৫.জমিদারকে সাহায্য করার জন্য ৩৪ জন কর্মচারী ছিল এর মধ্যে ২০ জন সিপাই।

৬. এরপর ফৌজদারি পদ তুলে দেওয়া হয় ১৭৮১ খ্রী:।
৭. শহরের শান্তিরক্ষার দায়িত্ব কোতোয়ালের হাতে। ৮.জমিদাররা নিজ নিজ এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার:-
ব্যয় সংকোচ নীতিঃ তিনি নাবালক নবাবের বাৎসরিক বৃদ্ধির ৩২ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষ নিয়ে আসে। তিনি শাহ আলমকে ২৬ লক্ষ ও বাংলার নবাবকে ৫০ লক্ষ্ টাকা দিতেন।

রোহিলাদের বিরুদের যুদধঃ এদের সাথে ব্রিটিশদের কোনো শএুতা ছিল না। কিন্তু হেস্টিংস আসার পর নানা বিষয় নিয়ে শএুতা হয়।

হেস্টিংসের পররাষ্ট্র নীতিঃ- রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অযোধ্যাকে কে কেন্দ্র করে Buffer state গড়ে তুলতে চান। আযোধ্যা থেকে রোহিলাদের দমন করে ঐ খানের নবাবের সাহায্যের জন্য যুদধ করতে চেয়েছিলেন।

উপসংহারঃ-Hunter বলেন,
"হেস্টিংস বাংলায় অসামরিক শাসনব্যবস্থার দৃঢ় ভিত্তি রচনা করেন"।
ড. স্পীয়ারের মতে, "তিনি ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের যথার্থ প্রতিষ্ঠাতা"।
(Hastings can be called the real founder of the British dominion in India))

পোস্ট ট্যাগঃ
#ওয়ারেনহেস্টিংসেরসংস্কারসমূহ#ওয়ারেনহেস্টিংস#ওয়ারেনহেস্টিংসেরবিচারব্যবস্থারসংস্কারসমূহ

No comments

Do leave your comments

Powered by Blogger.