জাতীয়তাবাদ কী?ভারতীয় জাতীয়তাবাদ কী? ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা।(What is Nationalism,what is indian Natinalism,Role of Education in Development of Indian Nationalism)
জাতীয়তাবাদ কী?ভারতীয় জাতীয়তাবাদ কী? ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা।(What is Nationalism,what is indian Natinalism,Role of Education in Development of Indian Nationalism)
জাতীয়তাবাদ:জাতীয়তাবাদ বলতে সাধারনত একই বংশোদ্ভূত বা জন গোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও মানসিকক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ চেতনা ও মানসিক অনুভূতিকে বুঝায় । জাতীয়তাবাদ হচ্ছে কোনো জাতিসত্তার মধ্যে ঐক্যের অনুভূতি,অর্থাৎ, স্বদেশের তথা মাতৃভূমির গৌরব ও অগৌরবকে কেন্দ্র করে সেই দেশের মানুষ বা জাতির অন্তরে স্বতঃ স্ফূর্ত অনুভূতি, আবেগ, চেতনা, আত্মমর্যাদাও আত্মাভিমান সঞ্চারিত হয় তাকেই জাতীয়তাবাদ বলে। জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারনা।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদঃ ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বলতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আদর্শগুলি, স্বাধীনোতর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাজনীতিতে সেই আদর্শের প্রভাব এবং ভারতীয় সমাজে জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাতের কারণস্বরূপ একাধিক আপাত-পরস্পর- বিরোধী আদর্শের সম্মিলিত একটি আদশকে বুঝায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাতের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বিকাশে শিক্ষার ভূমিকাঃ
শত শত বছর ধরে যে প্রাক ব্রিটিশ ভারতীয় সমাজ, ছিল তা বৈজ্ঞানিক সমাজ ব্যতিরকেই ছিল তা নয়। সেই সময় বেঁচে ছিল কৃষিও হস্ত শিল্পকে ভিত্তি করে এবং ভারতীয়রা গণিত, রসায়ন, জোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসায় পারদর্শী ছিল। কিন্তু তারপর বহু বছর ধরে ভারতীয় সমাজ প্রায় একই অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তার অনড় হয়ে ছিল। এবং ভারতীয় জনসাধারণ ও উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নতি করেনি।ভারতবর্ষে আধুনিক যুগের সূচনা করে ব্রিটিশরা। ব্রিটিশরা এদেশীয় ভারতীয় জনসাধারণকে বিজ্ঞান ও সামাজিকবিজ্ঞানের জ্ঞানের ক্ষেত্রে আধুনিক পাশ্চাত্যের ব্যপক ও গভীর সাফল্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
ভারতের প্রথম আধুনিক পুরুষ রাজা রামমোহন রায়। এছাড়া, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও, ডেভিড হেয়ার প্রমুখ এ দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যপক ভূমিকা রাখেন।
ইউরোপ ও আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ও হয় সমসাময়িক কালে। রাজা রামমোহন রায়- ভলতেয়ার, রুশো, কাল মার্কস এর সংস্পর্শে আসেন এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটান এবং তা সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষাব্যবস্থা:
ব্রিটিশ আমলে শিক্ষাববস্থা ছিল ধর্মকেদ্রিক। হিন্দু-রাষ্ট্রের 'ধমীয় অনুশাসনে" অন্য জাতের লোকের জন্য সর্বপ্রকার উচ্চ শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। ব্রাহ্মণেরা সেই উদ্দেশ্য নির্মিত বিশেষ বিশেষ শিক্ষা কেদ্ৰ যেমন টৌল, বিদ্যালয় এবং চতুষ্পাঠীতে পড়াশোনা করত। প্রাক-ব্রিটিশ ভারতে হিন্দুদের জন্য শিক্ষা ছিল খুবই সীমিত এই শিক্ষার উদ্শ্যেই ছিল শিক্ষাথীদের গোঁড়া হিন্দু বা গোঁড়া মুসলমন পরিণত করা। নিজ নিজ ধর্ম ও ধর্মানুমোদিত সামাজিক কাঠামোর -দ্বিধাহীন আনুগত্য পরায়ন করে তোলা-:ভারতবর্ষের পক্ষে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা একটা অত্যন্ত সূচনা ঐতিাসিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এটা নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ সরকারের একটা প্রগতিশীল কাজ ছিল।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতীয়তাবাদঃ-
ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার প্রসার সম্ভব হয়েছে ৩টি সংস্কারের মাধ্যমে।১. খ্রিস্টান মিশনারীরা
২. ব্রিটিশ সরকার ও
৩. প্রগতিশীল ভারতীয়রা।
১. খ্রিটান মিশনীয়রা:-
খ্রিস্টান মিশনারীরা ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে" ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল। তারা প্রধানত ভারতীয় জনসাধারণের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্ম বিস্তারের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটায়।
২.আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা:-
ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষা প্রসারে ব্রিটিশ সরকারই প্রধান ভূমিকা রাখে। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করে হাজার হাজার ভারতীকে -আধুনিক শিক্ষায় পারদর্শীক তোলে। " ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সমালাচনা” এ শিক্ষার লক্ষ্য ছিল। ব্রিটিশ সরকার নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য এই শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন।
১৮১৩ সালে চার্টার আইনের মাধ্যমে সরকার শিক্ষাক্ষেএে আমূল পরিবর্তন আনে।
১৮৩৮ সাল Trevelyan এদেশের শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন।তিনি তার" Education of the people of India” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
" ইংরেজি সাহিত্য এমন একটি বিষয়, এটি শুধুমাএ যোগাযোগের মাধ্যম নয় এটি যুক্তির সাহিত্যই বটে, এবং জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার ভাবনায় প্রেরণা যোগায়।”
৩.প্রগতিশীল ভারতীয়রা :
রাজা রামামোহন রায় ছিলেন প্রগতিশীল আধুনক শিক্ষার পথিকৎ। তিনি ইংরেজির এমনভাবে প্রসার ঘটিয়েছিলেন যে ইংরেজীর পাশাপাশি বিজ্ঞান সম্পর্কেও পারদর্শী হয়ে ওঠে ভারতীয়রা।
স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদের শিক্ষার জন্য আলীগড় আন্দোলন করেন। তিনি আলীগড়ে মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেন, বর্তমানে যা আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত ।
১৮৩৫ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকের প্রচেষ্টায় কলকাতায় মেডিকেল কলেজ বোম্বাই - এলফিনটোন ইনিস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর মাধ্যমে মেডিকেল কলেজের বপক উন্নতি হয়। এতে বাইরে থেকেও শিক্ষর্থীরা এদেশে আসে শিক্ষার জন্য। এর
১৮৫৪ সালে প্রকাশিত চার্লস উড এর Educational Despatch (শিক্ষা বিষয়ক নির্দেশপএ) এটিকে বলা হয় ভারতীয় শিক্ষার মহাসনদ।
আধুনিক শিক্ষার বিস্তার:
ভারতীয় প্রজাদের শিক্ষার ব্যাপারে ১৮১৩ সালের চার্টার এ্যাক্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ নেয়। কোম্পানি ১ম ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বছরে কমপক্ষে ১ লাখ টাকার অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এর ফলে ২ দলের সৃষ্টি হয়। তখন ২ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ছিল।
১.প্রাচ্যবাদী,
২.পাশ্চাত্যবাদী
প্রাচ্যবাদীরা চাইতো ভারতীয়দের শিক্ষা তাদের মাতৃভাষায় হোক রাজা রামমোহন রায় সহ বিভিন্ন পাশ্চাত্যবাদীরা চাইতো ইংরেজি শিক্ষা। কারণ ইংরেজি সাহিত্য ও বিজ্ঞান পাঠ ছাড়া ভারতীয়দের উন্নতি নেই। শেষে ব্রিটিশ কাউন্সিল পাশ্চাত্যবাদীদের পক্ষে রায় দেয়।
সত্তর এর দশকে তিলক ও আগরকর বোম্বাই প্রেসিডেন্সী "Deccan Education Society" গঠন করেন।গোপাল কৃষ্ণগোখলে একজন জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন।তিনি
এই society এর সাথে জড়িত ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে কেদ্ৰ করে জাতীয়তাবাদ তৈরি করা।
জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর:
★সংক্ষেপে জাতীয়তাবাদের সংগা?কোনো একটি দেশের বসবাসরত জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ, চেতনাই হলো জাতীয়তাবাদ। এটি একটি আধুনিক ধারনা ।
★ কাকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়?
রাজা রাম মোহন রায়কে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়।
No comments
Do leave your comments