Header Ads

Header ADS

১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমি। মুসলিম লীগ গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য?




১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমি। মুসলিম লীগ গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য?

ভূমিকা:
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ এর উদ্যোগে ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্ব ভারতীয় নিখিল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে সাড়ে পাঁচশত বছর এদেশে মুসলিম শাসন ব্যবস্থা কায়েম ছিল। এসময় হিন্দু ও মুসলমানগণ পাশাপাশি বসবাসের ফলে এক সম্প্রীতির সর্ম্পক গড়ে ওঠে। মুসলিম শাসকগণ ছিলেন বহিরাগত তারা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশীয় এলিটদের সঙ্গে একধরনের অংশীদারিত্ব গড়ে তোলেন। ব্রিটিশদের Divide and Rule এর মাধ্যমে মধ্যে মুসলমানরা বঞ্চিত হতে থাকে। বঞ্চনার ভেতরে ১৯০৫ - সালের বঙ্গভঙ্গ ছিল তাদের জন্য আশীর্বাদ। এর রেশ ধরে ধীরে ধীরে মুসলিম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। ১৯০৬সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা এই মুসলিম জাতীয়তাবাদেরই বহিঃপ্রকাশ। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ছিলেন মুসলীম লীগের প্রথম সভাপতি।

মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমিঃ- ১৮৭৭ সালে সৈয়দ আমীর আলীর উদ্যোগে" সেন্টাল ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশন" গঠনের সাথে স্যার সৈয়দ আহমদ দ্বিমত পোষন করেছিলেন। তিনি মুসলমানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আত্ন প্রকাশের পর হিন্দি এবং উর্দু ভাষার বিরোধ সৃষ্টি হলে সার্থের ব্যাপারে স্যার সৈয়দ আহমদ খান সচেতন হয়ে ওঠেন। এবং ১৮৮৯ সালে রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে " ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডিফেন্স এসোসিয়েশন” গঠন করেন৷ ১৮৯৩ সালে উত্তর ভারতে "মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অর্গানাইজেশন অব আপার ইন্ডিয়া" গঠিত হয়। ১৯০৩ সালে সাহরান পুরে মুসলিম রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঞ্জাবে "মুসলিম লীগ" নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। অন্যদিকে, বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দু জনগোষ্ঠির প্রতিবাদ এবং মুসলিম বিদ্বেষের ঝড় বয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্যার সলিমুল্লাহকে দারুনভাবে ভাবিয়ে তোলে। তিনি সর্বভারতীয় পর্যায়ে মুসলিম ঐক্যের কথা ভাবতে শুরু করেন। ১৯০৬ সালের নভেম্বরে সলিমুল্লাহ সমগ্র ভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের নিকট পত্রালাপে নিজের অভিপ্রায় তুলে ধরেন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাব রাখেন।
১৯০৬ সালের ১লা অক্টোবর আগা খানের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের একটি শক্তিশালী মুসলিম প্রতিনিধি দল লর্ড মিন্টোর নিকট পৃথক নির্বাচনের দাবি জানালে তিনি নীতিগত ভাবে তা মেনে নেন। এর ফলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ উৎসাহিত হন। ১৯০৬ সালে  ২৮-৩০ শে ডিসেম্বর ঢাকায় "সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন " অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নবাব - ভিকার উল মূলক। শাহবাগে অনুষ্ঠিত সমগ্র ভারতের প্রায় ৮ হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন।  নবাব সলিমুল্লাহ অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেন্সি অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাবহাকিম আজমল খান, জাফর আলী এবং আরো কয়েকজন প্রতিনিধি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। কিন্তু  প্রতিনিধির আপত্তির প্রেক্ষিতে কনফেডা-রেন্সি শব্দটি পরিত্যাগ করে লীগ শব্দটি গ্রহণ করা হয়। অবশেষে সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে All India Muslim league বা সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ঢাকায় এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে বঙ্গ-ভঙ্গ সমর্থন এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধি আন্দোলনের নিন্দা করা হয়।
১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার পর নবাব মুহসিন উল মূলক ও নবার ভিকারুল মূলক এ সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্র রচনার জন্য ৬০ জন সদস্য নিয়ে একটি সাময়িক সাংসদ (provisional committee) গঠিত হয়। এ সংসদকে বারো মাস সময় দেওয়া হয়। এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় লক্ষ্ণৌতে। ১৯০০ সালে মুসলিম লীজের অধিবেশনে এ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়।

আর সি মজুমদার তার সাথে মন্তব্য করেছেন এভাবে,
"হিন্দুদের মধ্যে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন প্রচন্ড ভাবে দানা বেঁধে ওঠে এবং কংগ্রেস তাদের স্বার্থের প্রতি সমর্থন জানায়। মুসলমানরা উপলব্ধি করেন যে হিন্দুদের রাজনৈতিক সংগঠনের বিশেষ করে কংগ্রেসের করেন মোকাবিলা করতে হলে মুসলমানদের নিজস্ব কেন্দ্রীয় সংগঠন থাকা উচিত"

ভারতীয় কাউন্সিল আইন (1861):1861 সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই আইন পাশ হয়। এই কাউন্সিল আইনে বলা হয়েছে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে আইনসভা গঠিত হবে এবং হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ যার ফলে মুসলমানরা পৃথক ব্যবস্থা চায় ।
লক্ষ্ণৌতে মুসলমান নেতৃবৃন্দের বৈঠক:- 1901 সালে লক্ষ্ণৌতে অক্টোবর মাসে সৈয়দ আহমদের মৃত্যুর পর (১৮৯৮ খ্রি) তার দুই ঘনিষ্ঠ অনুগামী "ভিকার উল-মূলক ও “মহসিন উল মূলক" এবং অন্যান্য নেতৃবিন্দ "মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি পৃথক রাজনৈতিক সংস্থা গঠনের কথা চিন্তা করেন। এই সভায় প্রস্তাব হয় যে মুসলমানদের জন্য অবশ্যই পৃথক সংগঠন প্রয়োজন। তবে তাদের এই প্রথম প্রয়াস, বিশেষ ফল শুরুপ্রসু হয়নি। 1905 সালে বঙ্গভঙ্গও সিমলা ডেপুটেশনঃ-
1905 সালে বঙ্গভঙ্গ এর ফলে সর্বভারতীয়রা দুইটি দলে ভাগ হয়ে যায় । এবং বঙ্গভঙ্গের এর ফলে সময় রাজধানী ছিল ঢাকা। 1911 সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করেন রাজা ৫ম জর্জ এবং বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে রাজধানী ঢাকা থেকে দিল্লীতে সথানান্তর করা হয় ৷

1906 সালের 1লা অক্টোবর মুসলমানদের প্রতিনিধি দল মুসলমানদের জন্য সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারেই লর্ড মিন্টোর কাছে উত্থাপন করেন। আগা খান ও ২৫ জন সিমলাতে একত্রে হয় লর্ড মিন্টোর সাথে চুক্তি করে যা সিমলা ডেপুটেশন নামে পরিচিত। মিন্টোর কাছে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার অনুরোধ করেন।  জন প্রতিনিধির (1906 সালে গভর্নর ছিল লর্ড মিন্টো)

সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য: [Aim of establishment of All india Muslim League]

1. ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা এবং সরকারের কোনো ব্যবস্থা সমন্ধে তাদের মনে ভ্রানত ধারণা জন্মালে তা দূর করা 2.ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থরক্ষা এবং তাদের অভাব, অভিযোগ ও দাবি দাওয়া গঠনমূলকভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা

3. এ সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি যেন -বিদ্বেষভাব সঞ্চার না হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

4. কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব করা।
5.মুসলিম লীগের এ সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়া ও মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি,হাইকোর্ট ও অন্যান্য আদালতে মুসলমান মুসলমান 'বিচারপতি নিয়োগ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুসলমানদের সংখ্যানুপাতে নিয়োগ করা ইত্যাদি ।
গুরুত্বঃ
মুসলীম গঠনের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয় । এবং এর মাধ্যমে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মুসলমানদের অংশ গ্রহণের সুযোগ এবং মুসলমানদের নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়। মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষারপ্রতিফলন ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলীম লীগ। এ প্রতিষ্ঠান উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিকাশের ধারা পাল্টিয়ে দিয়ে অবিরাম সংগ্রাম ও ঐক্যবদী কর্মকান্ডের মাধ্যমে মুসলমানদের স্বাধীনতার পথ উন্মুক্ত করে। মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবে রুপায়িত হয় ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম লীগের অভ্যুদয় ছিল একটি গতি পরিবর্তনকারী ঘটনা। মুসলিম লীগ ছিল ও ভারতীয় উপমহাদেশে  মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন। কংগ্রেস গঠনের শিক্ষা থেকেই মুসলমানরা আলাদা জাতি হিসেবে টিকে থাকার জন্য দাবি আদায়ের জন্য ১৯০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর 'সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠা করে।

No comments

Do leave your comments

Powered by Blogger.